২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

৩০ ডিসেম্বর যে ক্ষতি হয়ে গেছে

৩০ ডিসেম্বর যে ক্ষতি হয়ে গেছে - ছবি : সংগৃহীত

ছোট বেলায় রচনা পড়তে গিয়ে শিখেছিলাম, 'When money is lost nothing is lost; when health is lost something is lost; but if character is lost everything is lost.' চরিত্রের মাহাত্ম্য এবং গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এই ইংরেজি প্রবাদটি সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। আর কোনো ব্যক্তি ও জাতির আদর্শ, আচরণ ও বৈশিষ্ট্য বোঝাতে ‘চরিত্র’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ‘চরিত্র’ বলতে আমরা বুঝি কথাবার্তায়, চালচলনে, চিন্তাভাবনায় এবং কাজকর্মে একটি শোভন, সুন্দর ও ভালো মনোভাব। চরিত্র মানুষকে ন্যায় ও সত্যের পথে পরিচালিত করে। এটাকে নৈতিক অবস্থান বলেও চিহ্নিত করা যায়। চরিত্রের মাধ্যমেই মানুষের পরিচয় প্রতিফলিত হয়। মানুষ হিসেবে যে ইতিবাচক গুণাবলির কথা আমরা বলে থাকি, চরিত্র তার সবই ধারণ করে। সে অর্থে চরিত্রই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।

ইংরেজ লেখক স্যামুয়েল স্মাইলস চরিত্রকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে : The crown and glory of life is character.' ব্যক্তিজীবন প্রকাশ হয় সমষ্টির জনচরিত্রে। ‘সমষ্টি’ মানে হচ্ছে একটি সমাজ, একটি জাতি। তাই জাতীয় চরিত্র বা National character-এর কথা শোনা যায়। যেমন জাপানিরা কর্মঠ, ফরাসিরা আমুদে এবং বাঙালিরা ভীতু। ব্যক্তি বা জাতীয় চরিত্র কোনো আকস্মিক বিষয় নয়। শিশুকাল থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিবেশ প্রতিবেশ ব্যক্তির চরিত্র গঠন করে থাকে। একইভাবে দীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং রাজনীতি-অর্থনীতি জাতির মানস তৈরি করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে nation building বা জাতি গঠন প্রক্রিয়া বলে একটি কথা আছে। এই প্রক্রিয়ায় একটি রাষ্ট্র নাগরিকদের কাক্সিক্ষত চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য নির্মাণ করে। ইতিহাস প্রমাণ করে, জার্মানদের যোদ্ধা জাতি হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে; ব্রিটিশরা বণিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে ছিল; চীনারা একসময় আফিমে বুঁদ হয়ে ছিল। পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় জাতিগুলো তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী নাগরিক চরিত্র গঠনের কৌশল বদলায়।


মনীষী অ্যারিস্টটল রাষ্ট্রকে ‘একটি নৈতিক প্রতিষ্ঠান’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্র একটি নৈর্ব্যক্তিক প্রতিষ্ঠান এবং নীতি ও নৈতিকতা রাষ্ট্রের প্রাণ। নাগরিকদের সততা, সাহস ও ন্যায়নিষ্ঠার মাধ্যমে গড়ে তোলা রাষ্ট্রের কর্তব্য। এর ব্যতিক্রম হলে সেটি বিকৃত রাষ্ট্র। ইতিহাসের পরিহাস এই যে, একসময়ে এই বিকৃত রাষ্ট্রের পক্ষেও মতামত দেখা যায়। ভারতে প্রাচীনকালে কৌটিল্য বা চাক্য এবং ষষ্ঠদশ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাকিয়াভেলি রাষ্ট্রের স্বার্থে অন্যায়কে অনুমোদন করেছিলেন। তারা মনে করতেন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাজা ‘ছল, বল, কলা-কৌশল’ সব কিছুই অবলম্বন করতে পারেন। অবশ্য তারা প্রজাসাধারণ বা নাগরিকদেরকে ‘চোর, গুণ্ডা-পাণ্ডা, বাটপার-বদমায়েশ ও চাঁদাবাজ’ বানানোর পক্ষে মত দেননি। কিন্তু রাজা-বাদশাহ, আমির-ওমরাহ, শায়খ-সুলতান, স্বৈরাচার-দুরাচার এবং প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীরা যখন অন্যায় আদেশ দেন, শক্তি প্রয়োগ করেন এবং নিপীড়নকে ক্ষমতায় থাকার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন, তখন তারা নাগরিকদের জন্য কী দৃষ্টান্ত রাখেন? শাসকেরা যখন তাদের একান্ত অনুগত আমলা ও বিশ^স্ত বাহিনীকে বেআইনি কাজে ব্যবহার করেন, তখন অন্যরা সেটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে অনুসরণ করে। এভাবেই তৈরি হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি।

বাংলাদেশে জাতিরাষ্ট্রের মূলনীতি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জাতীয় ঐকমত্য [National consensus] সৃষ্টি হয়নি। জনগণের আশা-আকাক্ষা, বিশ্বাস ও জীবনবোধবিরোধী আরোপিত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই হতাশা, দ্বৈধতা ও বিতর্ক বর্তমান। শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে নৈতিকতাকে গ্রহণ করা হয়নি। মাটি ও মানুষের সাথে সম্পর্কহীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং ফরমায়েশি গণমাধ্যম কাক্সিক্ষত নাগরিক নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহ হিসেবে। বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে আগামী দিনের নাগরিকেরা একটি সুনির্দিষ্ট ও সার্থক রাষ্ট্রীয় আদর্শে গড়ে ওঠেনি।

সব সময়ই অস্থায়ী, উদ্দেশ্যমূলক ও সুবিধাবাদী নীতিমালা অনুসৃত হয়েছে। এ অভিযোগ সব দল ও মতের বিরুদ্ধেই উত্থাপন করা যায়। বিশেষ করে বিগত এক দশকে এদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোনো আদর্শের আদলে গড়ে না তুলে অসত্য, অন্যায়, অহঙ্কার এবং অযাচিত বৈশিষ্ট্যে পরিচালনা করা হয়েছে। অব্যাহত অপশাসন, দুর্নীতি, দুষ্কৃতি, জবরদখল, লুটপাট, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দলীয়করণ দ্বারা জাতির সামগ্রিক চরিত্র বিনষ্ট করা হয়েছে। অন্যায়-অত্যাচার, খুন-জখম, গুম, হামলা-মামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন রাষ্ট্রীয় সাধারণ নীতিতে পরিণত হওয়ায় সামাজিক সমাজবন্ধন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিরোধী মানেই শত্রু- এই মনোভাবজাত রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা সমাজে হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ আর অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমার জন্ম দিয়েছে। বেপরোয়া সন্ত্রাসী আচরণ নারীর প্রতি সহিংসতা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি করেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত, বেশির ভাগ ধর্ষণের মামলার আসামি এখনকার ক্ষমতাসীন দলের লোক বলে প্রমাণিত। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার দাপট এবং অবৈধ আশ্রয়-প্রশ্রয়ই দায়ী বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। ‘নেশার রাজ্য’ সম্পর্কেও একই সত্য। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন নেশাখোর এবং মাদক ব্যবসায়ীদের না ধরে বিরোধীদের ধরা হয়েছে। আত্মসমর্পণের পর কাউকে হত্যা করা কোনো আইনেই সমর্থনযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ করেছে সংশ্লিষ্ট পরিবারবর্গ। ‘মাদক সম্রাট’ নামে পরিচিত জনৈক সাবেক সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন না দিয়ে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দিয়ে ক্ষমতাসীনেরা মানুষকে বোকা বানানোর উদাহরণ সৃষ্টি করেন। জাতীয় চরিত্র হননে প্রশ্রয় যে কী রকম কৌশলী হতে পারে এটা তার একটি প্রমাণ।

জাতীয় রাজনীতিকে এতটাই কলুষিত করা হয়েছে যে, সে ক্ষতি কখনো পূরণ হবে না। এটা দুই ধরনের : প্রথমত, স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতি। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিচরিত্রের বাণিজ্যিকীকরণ ও দুর্বৃত্তায়ন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দুটো বিষয়কে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতি হিসেবে জাতীয় সংসদকে অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। সংসদীয় বিরোধী দল তামাশায় পরিণত হয়েছে। অবশেষে এখন প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। সবচেয়ে সর্বনাশা ক্ষতিটি হলো জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্যপর্যায়ের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সমূলে ধ্বংস করা। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে। এবার ক্ষমতাসীনেরা ভোটারসহ একতরফা নির্বাচন করেছেন। দুটো নির্বাচনকেই তামাশার নির্বাচন বলে অভিহিত করা যায়।

গত ৩০ ডিসেম্বর তারা যে প্রকৌশল প্রয়োগ করেছেন, তা অভাবনীয় এবং অভূতপূর্ব। রাষ্ট্রযন্ত্রকে সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনী কারসাজিতে এমন সর্বাত্মক ব্যবহার করার নজির সমকালীন বিশ্বে বিরল। পুুলিশের বদনাম তারা ‘ঘুষ খায়’। এই প্রথমবারের মতো জানা গেল, তারাও ঘুষ দেয়। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অনেকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পুলিশের কাছ থেকে ‘বুঝে পেয়েছেন’ বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা এর প্রতিবাদ করেছেন বা টাকা নেননি তাদের কায়দা করে অপমান অপদস্থ, এমনকি আটক করার অভিযোগ এসেছে। কার্যত, সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষের আস্থা বিশ্বাস উবে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও যে আর এই ‘কায়দা’ ছাড়া হবে না তা জনগণ বুঝে গেছে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকারি দলের লোকজন বলেছিলেন- ‘চেয়ারম্যান ওপেনে-মেম্বার গোপনে।’ তখন ওই দলের মেম্বার পদপ্রার্থীরা বলেছিলেন, ‘আমরা দোষ করলাম কিসে? সবই হতে হবে ওপেনে।’ দেখা যাচ্ছে যে, জাতীয় নির্বাচন থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নির্বাচনব্যবস্থা সম্পর্কে আস্থা বিশ্বাস বাস্তবে অবশিষ্ট নেই। কোনো সরকার যদি চেষ্টা করে এই আস্থা ফিরিয়ে আনতে, তা হবে খুব কঠিন।

রাষ্ট্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নির্বাহী বিভাগ। আমরা একে ‘আমলাতন্ত্র’ বলি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যন্ত সবাই শাসনপ্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এই সরকার নির্বাহী বিভাগের এমন দশা করেছে যে, তারা দারোয়ান থেকে দারোগা, ইউএনও থেকে ডিসি পর্যন্ত নিজেদের দলের কর্মী হিসেবে দেখতে চান। বিগত নির্বাচনে তারা অন্য দলের বা ভিন্ন মতের বা নিরপেক্ষ পোলিং অফিসারের অস্তিত্বও স্বীকার করেননি। রিটার্নিং অফিসার বা জেলা প্রশাসকেরা এমন আচরণ করেন যে, ভিন্ন মতের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে তার মনোনয়নপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে প্রার্থী যখন উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে হাজির হলেন, পরদিন সেই মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন উপদেষ্টা ২০১৪ সালের নির্বাচন নির্দেশ প্রদানে কৃতিত্ব দাবি করেছিলেন। এবারো ‘কারসাজিতে করিৎকর্মা’ সেই ব্যক্তিটি আমলাতন্ত্রকে দিয়ে ‘অভূতপূর্ব এবং নিরঙ্কুশ’ নির্বাচন করিয়েছেন বলে শোনা গেছে। যেভাবে আমলাতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে তা সহজে পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। বরং আগামীতে যে দলই ক্ষমতাসীন হোক, আমলাতন্ত্র এ প্রবণতা থেকে মুক্ত না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

শাসক দল আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা নিয়ে কী আচরণ করেছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। গত নির্বাচনে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, সরকারি দল বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে স্বার্থ উদ্ধার করেছে। সংসদের অনেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নিন্দুকেরা বলে এ দায় কিছুটা হলেও বিচার বিভাগের। ‘চেম্বার জাজ মানেই সরকারি দলের পোষকতা’- এরকম মন্তব্য করে জেল খেটেছেন ‘আমার দেশ’-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আজো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক আইনজীবী। উচ্চ আদালত যদি আইনি শক্তির বলে সোজা হয়ে না দাঁড়ায়, তাহলে মানুষ দাঁড়াবে কোথায়? এ ক্ষতি নিকট ভবিষ্যতে পূরণ হওয়ার নয়।

‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই।’ ক্ষমতারূপী ‘সোনার হরিণে’র পেছনে ছুটতে গিয়ে ক্ষমতাসীনেরা ন্যায়-অন্যায়, নীতি-দুর্নীতি ও সভ্যতা-সংস্কৃতির কোনো তোয়াক্কা করেননি। সামগ্রিকভাবে তারা জাতীয় চরিত্র নষ্ট করেছেন। ছাত্র-যুবা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক কর্মী- কেউই এ থেকে বাদ যাননি। তাদের ছাত্র সংগঠনটির এতই সুনাম যে, লোকজন তাদের কথা শুনলে আঁতকে ওঠে। এখন তারা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, পুলিশকে পর্যন্ত পিটুনি দিচ্ছে। কাউকে আশকারা দিয়ে মাথায় তুললে নামানো কঠিন হয়ে পড়ে। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, পুলিশবাহিনী এবং ‘হেলমেটবাহিনী’র মধ্যে নির্বাচনের সাফল্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। সরকার অন্যায়ভাবে ছাত্র-যুবাদের একাংশকে ক্ষমতায় টিকে থাকার বাহন হিসেবে যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা তাদের স্বাভাবিক সততা ও সাহসকে ম্লান করে দিয়েছ্।ে তাদের পেছনে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ফলে তারা অলস, আমুদে এবং সুবিধাবাদী শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে। এমনকি তারা নানা ধরনের সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অন্যায় অর্থ কাউকে কাউকে নেশাগ্রস্ত করে তুলছে। তাদের কর্মক্ষমতা এবং কর্মস্পৃহা লোপ পাচ্ছে। এ ধরনের ছাত্র-যুবারা দখল ও বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এভাবে ‘কিশোর-যুবকদের বাহিনী’ গড়ার খবর পত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে। এ ধরনের বিষয় নিয়ে প্যারোডিও রচিত হচ্ছে। যেমন : ‘কইছে দাদায়, বুঝবে নেতায়- কোপা শামসু কোপা।’

আগেই বলা হয়েছে, একটি জাতি গড়ে ওঠে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে- রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের সৎ, সাহসী ও মানবিক জীবন গড়ে তোলা। তা না করে রাষ্ট্রকে যদি বিপথে পরিচালনা করে, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে বাধ্য। জাতির পরিহার্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথার্থ ধারায় পরিচালিত করা যেমন কর্তব্য, ঠিক তেমনি ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে সৎ গুণাবলির বিকাশ ঘটানো সরকারের দায়িত্ব। ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ যে দেশটি অর্জিত হয়েছে, তার ভবিষ্যৎ এভাবে নষ্ট হতে দেয়া যায় না। ‘কী দেখার কী দেখছি, কী ভাবার কী ভাবছি’- হতাশার এ কথা আমরা আর উচ্চারণ করতে চাই না। আমরা চাই জাতির সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। সেই প্রত্যাশিত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে আমাদের আহ্বান পরিবর্তনের। ‘অবশ্যই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না সে নিজেই নিজ অবস্থার পরিবর্তন সাধন করে।’ (আল কুরআন) 
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 

Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement